আগ্রা ভ্রমণের গল্প ১


আগ্রা ভ্রমণের গল্প

ভোর বেলা ঘুম ভেঙ্গেই মনে হল,আজ সেপ্টেম্বরের ১৭ তারিখ । অনেকদিনের একটা শখ পূরণ হতে যাচ্ছে আর কয়েক ঘণ্টা পরই ।মেডিক্যাল স্টুডেন্ট হওয়ায় সুবাদে বেশ কয়েকটা জায়গায় ক্যাম্প করার সুযোগ হয়েছে।সেই সাথে ঘুরাঘুরি ফাউ । কিন্তু সেসব দেশের ভেতরেই।এই প্রথম দেশের বাইরে, ইন্ডিয়া ট্যুরে যাচ্ছি । এবার শুধুই ঘুরাঘুরি ,উরাউরি । ভাবতেই মনটা ভালো হয়ে গেলো । 
সেই কবে থেকে কত প্ল্যানিং , কত উত্তেজনা এই ট্যুরটাকে নিয়ে !আমি শুধু একটা একটা করে দিন গুনে গেছি । এখনো গুনছি , তবে দিন নয়...ঘণ্টা । কখন যে রাত হবে !


রাত ১০.৩০ ।
এইমাত্র আমাদের বাস ছাড়ল । ঢাকা-কোলকাতা ,শ্যামলী বাস । 
২ ঘণ্টা আগে যখন কলেজের হসপিটাল বিল্ডিং এর নীচে আমরা জড় হচ্ছিলাম একজন একজন করে ,দারুন লাগছিলো সবার আনন্দ আর উত্তেজনা দেখতে ।আমরা মোট ২৫ জন।কেউ ছবি তোলায় ব্যাস্ত , কেউ লাগেজ নিয়ে ব্যাস্ত ,কেউ মন দিয়ে শুনছে বাবা-মায়ের হাজারো উপদেশ ।আর আমরা ৬ বন্ধু ব্যাস্ত হয়ে গেলাম আমাদের গল্পে । ''এটা এনেছিস?'' ''ওটা নিয়েছিস তো ।'' ''হলুদ গেঞ্জি (ট্যুর টি-শার্ট) টা কোথায় তোর ?''...আমাদের সব হিজিবিজি গল্প! 
এর মধ্যেই এসে পরলেন আমাদের এই ট্যুরের দুই প্রধান গাইড । রিয়াসাত স্যার এবং আকাশ ম্যাম ।ওনারা স্বামী স্ত্রী। আমাদের কলেজেরই স্টুডেন্ট ছিলেন।এখন টিচার ।তাই যতটা না শিক্ষক,তার থেকে বেশি বন্ধু।এসেই বললেন , ''তোমাদের গেঞ্জি কই?এখনি পরে ফেল সবাই । নাহলে কাওকে নিয়ে যাবনা । ''
অসহ্য ক্যাটক্যাটা হলুদ রঙা গেঞ্জিটা পড়তে সবারই ভীষণ অনিচ্ছা!তবু পড়তে হল । আর তারপরে আমাদের বাস ছুটে চলল হাইওয়ে ধরে । 
বাসের দুলুনি আর অন্ধকার দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম । হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে দেখি বাস থেমে আছে ।ঘড়িতে রাত তিনটা।কি হল ,বুঝলাম না । শুধু শুনলাম বাসের চাকা পাংচার । সকাল না হলে ঠিক করা যাবেনা ।স্যার-ম্যাম খুব টেনশন করছিলেন , কারণ আগামীকাল রাতে আমাদের কোলকাতা থেকে আগ্রা যাবার ট্রেন আগেই বুক করা হয়ে গেছে । এখন একটু সময়ের এদিক ওদিক হওয়া মানে অনেক রিস্কে থাকা । আমাদের সবার দায়িত্ব ওনাদের ওপর,তাই চিন্তাটাও বেশি । আমরা কিন্তু ওসব ঝামেলার মধ্যে নেই।সবার মনেই বেশ একটা এডভেঞ্চার এডভেঞ্চার ভাব । এক সিট থেকে আরেক সিটে আড্ডা দিয়ে,গান গেয়েই পার করে দিলাম বাকি রাতটা ।
সকালে বাস ঠিক করে,আবার শুরু হল আমাদের যাত্রা ।
থামলাম একদম বেনাপোল এসে । এর মধ্যে জেনেছি ,আমাদের রুটিন একটু অদল-বদল হয়েছে । কোলকাতাতে পৌঁছে আমাদের হোটেলে ওঠার কথা ছিল । কিন্তু , সেটা করতে গেলে আগ্রার ট্রেন মিস করার সম্ভাবনা আছে । তাই আমরা একবারে শিয়ালদহ ষ্টেশনে যাবো বর্ডার থেকে । তারপর আগ্রা । 
বর্ডার ক্রস করে পা রাখলাম ইন্ডিয়ার মাটিতে । বেনাপোল সীমান্ত গেট পার হলাম।কেমন একটা যেন অনভূতি! এই প্রথম বার দেশের বাইরে যাচ্ছি বলেই বোধহয় , একটু কষ্ট হল বাংলাদেশ কে ছেড়ে যেতে ।
মোবাইল যে সামান্য নেটওয়ার্ক নিয়েই বাসায় কথা বলে নিলাম।ডলার ভেঙ্গে রূপী করলাম।


( আমার ক্যামেরায় ভারতের প্রথম ছবি )



সারাদিন একটানা চলা,মাঝখানে লাঞ্চ ব্রেক।
সন্ধ্যা বেলা সূর্য ডোবার পর বাস থেকে নেমে অনেকটা হেটে পৌঁছলাম শিয়ালদহ ষ্টেশনে । সবাই ভীষণ ক্লান্ত । ওয়েটিং রুমের বাথরুমেই কোনরকম করে ফ্রেশ হয়ে নিলাম । কিছুক্ষণ পরেই হাতে এলো রাতের খাবার । সেই কোন দুপুরে হাইওয়ে রেস্টুরেন্টে খেয়েছিলাম । জিরা পোলাও আর চিলি চিকেন হাতে নিয়ে ক্ষুধটা তাই আরও বেড়ে গেলো । কিন্তু, কে জানত যে ইন্ডিয়ান খাবারের এত সুনাম , সেই খাবার খোদ ইন্ডিয়াতে বসে দু' চামচের বেশি মুখে তুলতে ইচ্ছে করবেনা ! আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম,সবারই এক অবস্থা ।কারোরই ঠিকমতো খাওয়া হলনা । বাংলাদেশের খাবারের আসলেই তুলনা নেই।



রাত ১১.৩০ এ আমাদের ট্রেন এলো ।
তাড়াহুড়া করে সবাই ট্রেনে উঠে পড়লাম । আমরা বেশ সৌভাগ্যবান ,এক বগীতেই সবার জায়গা পেয়েছিলাম । কিছুটা সময় লাগলো নিজেদের আর লাগেজগুলোকে গুছিয়ে নিতে । সবাই বারবার করে বলে দিয়েছিলো বলে আমার ধারণাই হয়ে গেছিল,ইন্ডিয়াতে শেকলে বেঁধে না রাখলে ব্যাগ চুরি হবেই।আমি আবার জিনিস হারাই বেশি।তাই সারা ট্রেন জার্নি তটস্থ হয়ে ছিলাম,এই বুঝি আমার ব্যাগ-পাসপোর্ট সব গেলো।
যাইহোক সব গুছিয়ে বসলাম জানালার পাশে । গভীর রাতের জার্নি আমি খুব পছন্দ করি।আর ট্রেন জার্নির মজাটাই আলাদা । ঝড়ের গতিতে অন্ধকার কেটে ছুটে চলছে ট্রেন । হুস হাস করে পেরিয়ে যাচ্ছি একেকটা ষ্টেশন । দারুন লাগলো । তবে বেশিক্ষণ জেগে থাকা হলনা । ঘুমিয়ে গেলাম অল্প পরেই ।



পরদিন সারাদিন পেটের ভেতর ।বোর হলাম না কিন্তু একবিন্দুও । চারপাশে এত সব বন্ধু থাকলে কি বোর হওয়া যায়! আড্ডা , গান , খেলা , হাসি আর ছবি তুলে কেটে গেলো সময়গুলো ।


( ট্রেনের ভেতর দুষ্টুমি ) 



আকাশ ম্যাম আর রিয়াসাত স্যার ও ভিড়ে গেলেন আমাদের সাথে । শুধু প্যানট্রি কারের বিস্বাদ খাবার গুলো বাদ দিলে পুরো ট্রেন জার্নিটাই ছিল মনে রাখার মত ।প্রায় ১৭ ঘণ্টার জার্নি শেষে পৌঁছে গেলাম শাহজাহান-মমতাজ এর ভালোবাসার শহর আগ্রা ।




মুঘল যুগের ভারত ইতিহাসের প্রাণকেন্দ্র আগ্রা 



উঠলাম হোটেল রামনাথ এ । আজ রাতের জন্য এটাই আমাদের আস্তানা । স্যার-ম্যাম সবার রুম বুঝিয়ে দিয়ে বললেন রেস্ট নিয়ে তৈরি হয়ে যেতে । ওনারা আমাদের ম্যাকডোনালড'স এ খাওয়াবেন । আসলে আমরাই ওনাদের কাছে বায়না ধরেছিলাম । সেটা রাখতেই আজকের এই ট্রিট,সাথে ঠিকঠাক মতো ইন্ডিয়া পৌঁছানোর সেলিব্রেসনটাও হবে । ক্লান্তি ভুলে সবাই তারাতারি তৈরি হয়ে গেলাম ম্যাকডোনালড'স এ । মজা করে টেস্ট করলাম ওদের বিখ্যাত বার্গার আর মাত্র দশ রূপির দুর্দান্ত আইসক্রিম । সাথে চলল ফটোসেশনও ।
হোটেলে ফিরে আবার রাতের খাবার খেতে হল । যদিও কারও পেটেই তেমন জায়গা ছিলনা । তবুও স্যার এর অর্ডার । সবাই একসাথে বসে খেতে হবে । পেট ভরা থাকলেও একসাথে সবাই মিলে গোল হয়ে বসে খেতে খারাপ লাগছিলো না । আর রান্নাটাও দারুণ ছিল । খাবার শেষ করে রুমে এসে ঘুমিয়ে পরলাম,পরদিন তাজমহল দেখার স্বপ্ন চোখে নিয়ে ।



******** তাজমহল *********



সকাল হতে না হতেই হাজির হলাম তাজমহলের গেটে ।



(প্রবেশ পথ--এখান থেকে টিকেট কেটে ঢুকতে হয় )



ভারতীয়দের জন্য তাজে ঢোকার টিকিট দশ রুপি আর ফরেনারদের জন্য ১০০০ রুপি । সুতরাং , চালাকি তো একটা করতেই হবে। সবাই আলাদা আলাদা অথবা জোড় বেধে ঢুকলাম । কেউ কাওকে চিনিনা এমন ভাব। আমি আর মৌরি একসাথে।আমাকে দেখে টিকিট চেকারের সন্দেহ না হলেও , মৌরিকে দেখে কেন জানি আমাদের আটকে দিলো । আমরা কি আর কম দুষ্টু ! ঠিকই ঝাড়ি টাড়ি মেরে ওদের বিশ্বাস করিয়ে ফেললাম আমরা কোলকাতার মেয়ে । চাঁপাডালি মোড় ,বারাসাত থেকে এসছি তাজমহল বেড়াতে ।এরপর দশ রুপিতেই ঢুকে পরলাম মার্বেলের শোকগাথা,পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের একটি--''তাজ'' দেখতে।


 



( তাজমহলের প্রধান প্রবেশ ফটক )


 

( ভেতর দিক থেকে ফটকের ছাদ )



তাজমহল আগ্রায় যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত। এর বয়স নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে।কিন্তু কোনো বিতর্ক নেই যে, অমর প্রেমের নিদর্শন হলো তাজমহল।



( দূর থেকে তাজকে দেখা )



ফার্সিতে তাজমহল অর্থ প্রাসাদের মুকুট হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি একটি স্মৃতি সৌধ। সম্রাট জাহাঙ্গীরের পুত্র খুররম ১৬১২ সালে ফার্সি-রাজকন্যা আরজুমান্দ বানু বেগমকে বিয়ে করেন। সম্রাট জাহাঙ্গীর বিয়ের দিনই আরজুমান্দ-এর নতুন নাম দেন মমতাজ মহল। সম্রাট জাহাঙ্গীর মারা যাবার পর খুররমকে সম্রাট ঘোষনা করা হয়। খুররম পঞ্চম মোঘল সম্রাট হিসেবে সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং তার নতুন নাম রাখা হয় শাহ্জাহান। শাহ্জাহান ও মমতাজ মহল-এর মধ্যে ভালোবাসা এতো গভীর ছিল যে, রাজকার্য থেকে শুরু করে সামরিক অভিযান পর্যন্ত মমতাজ ছিলেন তার স্বামীর অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী। তাদের সংসার জীবন ছিল আঠারো বছরের এবং এর মধ্যে তাদের ১৪টি সন্তান লাভ করে। সর্বশেষ সন্তান জন্মলাভের সময় ১৬৩০ সালে সম্রাট শাহ্জাহান-এর সঙ্গে এক সামরিক অভিযানে অবস্থান কালে মমতাজ মহল মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগে শাহ্জাহানের কাছ থেকে মমতাজ চারটি প্রতিশ্রুতি আদায় করেছিলেন।যার মধ্যে দুটি ছিল --সম্রাট শাহ্জাহান তাদের ভালোবাসার পবিত্রতা ও সৌন্দর্যকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য একটা সৌধ নির্মাণ করবেন এবং প্রতি মৃত্যুবার্ষিকীতে সম্রাট তার সমাধিতে আসবেন।সম্রাট প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছিলেন। ২০ হাজার লোকের ২২ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাজমহল ।তবে তাজমহলের নির্মাণ কাজ শেষ হতে না হতেই শাহ জাহান তাঁর পুত্র আওরঙ্গজেব দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত ও আগ্রার কেল্লায় গৃহবন্দী হন। কথিত আছে, জীবনের বাকী সময়টুকু শাহ জাহান আগ্রার কেল্লার জানালা দিয়ে তাজমহলের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়েই কাটিয়েছিলেন।



( রোদের আলো-ছায়ার খেলা তাজের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ )




তাজমহল দেয়াল ঘেরা আগ্রা শহরের দক্ষিণ অংশের একটি জমিতে তৈরি করা হয়েছিল যার মালিক ছিলেন মহারাজা জয় শিং। শাহজাহান তাকে আগ্রার মধ্যখানে একটি বিশাল প্রাসাদ দেওয়ার বদলে জমিটি নেন।
অসাধারণ এই মহলের নির্মান কাজ শেষ হতে প্রায় বাইশ বছর সময় লেগেছিল এবং বিশ হাজার কর্মী এই নির্মাণ কাজে নিয়োজিত ছিল। এই মহান স্থাপত্য নির্মাণে খরচ হয়েছিল প্রায় ৩২ মিলিয়ন রুপী এবং এর নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৬৪৮ সালে। দিল্লী, কান্দাহার, লাহোর এবং মুলতানের সুদক্ষ রাজমিস্ত্রীগণকে তাজের নির্মাণ কাজে নিয়োজিত করা হয়। অধিকন্ত্ত বাগদাদ, শিরাজ এবং বোখারার অনেক দক্ষ মুসলিম নির্মাতা তাজের বিশেষ কাজগুলি করেন। নির্মাণকাজের দলিলে উল্লেখ আছে যে, তাজের প্রধান স্থপতি ছিলেন সেই সময়ের প্রখ্যাত মুসলিম স্থপতি ওস্তাদ ঈসা। 



একটি বর্গাকার(১৮৬ x ১৮৬) ক্ষেত্রের প্লাটফর্মের মোড়ানো চৌকোনার উপর অসমান অষ্টভুজাকৃতির আকার ধারন করেছে তাজ মহল।
ভবনের নকশা কারুকাজখচিত পরস্পরসংবদ্ধ শাখা-প্রশাখার ধারনায় তৈরী যাতে একটি প্রশাখা নিজ শাখার উপর দাড়িয়ে আছে এবং প্রধান কাঠামোর সাথে সুচারুভাবে সংহত হয়েছে। 



এই চমৎকার সমাধিসৌধ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়েছে- প্রধান প্রবেশ পথ, একটি প্রশস্ত বাগান, একটি মসজিদ (বামে), একটি অতিথি নিবাস (ডানে) এবং কয়েকটি রাজকীয় ভবন।
প্রধান কাঠামোর উপর চারটি পুল আবার চারটি ভাগে বিভক্ত হয়ে তাজের চমৎকার নকশাকে আরও শৈলিতা দান করেছে । 



পুরোটা মহল ঘুরে ঘুরে দেখলাম, সত্যিই অসাধারন । তাজমহলে উঠার সময় জুতা পরে উঠে যায় না, জুতার উপরে কাপড়ের মোজার মতো একটা পড়তে হয়।তাজমহল বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নরূপে পর্যটকদের কাছে ধরা দেয়। যেমন ভোরবেলায় গোলাপী, দুপুর-বিকেলে দুধ সাদা, জোৎস্নার আলোয় সোনালী এবং চাঁদের আলোয় মুক্তোর মত জ্বল জ্বল করে। এছাড়া বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন রং । এসব শোনা কথা ছিল।আজ দেখলাম।তিনটে রঙ দেখতে পেলাম । দুধ সাদা , হালকা হলুদ আর ধূসর ।



( দুধ সাদা )



( হালকা হলুদ )



( ধূসর )



তাজ মমতাজ এর সমাধি সৌধ হলেও,শাহ্জাহানের মৃত্যুর পর তাকেও তাজমহলের মাঝখানে একটি ঘরে মমতাজ এর পাশেই সমাহিত করা হয়।আমরা সেই দুটো সমাধিও দেখলাম ।



আরও কয়েকটি ছবি---


 

( যমুনা নদী --যার পাড়ে তাজমহল )



( টিকেট কেটে ঢুকার পরেই এই জায়গাটা )



( মহল চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে এই উঁচু দেয়াল )


 

( শাহজাহান-মমতাজের সমাধিতে যেতে হয় এই সিঁড়ি দিয়ে নেমেই )



( ভিত্তি গম্বুজ এবং মিনার )



( শ্বেত পাথরের নকশা কাটা দেয়াল,খুবই সুন্দর ! )


 

( গম্বুজের ভেতরের দিক )




( তাজমহলের চারদিকের মিনার গুলোর একটি )




( মহলের ভেতরের মসজিদ )





তাজমহলকে মুঘল স্থাপত্যশৈলীর একটি আকর্ষণীয় নিদর্শন হিসেবে মনে করা হয়, যার নির্মাণশৈলীতে পারস্য, তুরস্ক, ভারতীয় এবং ইসলামী স্থাপত্যশিল্পের সম্মিলন ঘটানো হয়েছে। যদিও সাদা মার্বেলের গোম্বুজাকৃতি রাজকীয় সমাধীটিই বেশি সমাদৃত, তাজমহল আসলে সামগ্রিকভাবে একটি জটিল অখণ্ড স্থাপত্য। এটি ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। তখন একে বলা হয়েছিল "universally admired masterpiece of the world's heritage।"



তাজ ঘুরে ঘুরে দেখতে ভালই লাগছিলো।কিন্তু প্রচণ্ড রোদে ভীষণ ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম।জলের পিপাসাও ছিল দারুণ।
মহলের ভেতরেই জল পানের ব্যাবস্থা আছে সর্বসাধারণের জন্য।
খুব ঠাণ্ডা আর মিষ্টি জল।সেখান থেকেই সবাই পিপাসা মিটালাম।তারপর কিছুক্ষণ বাগানে ঘুরে বেরিয়ে ফিরে এলাম হোটেলে ।



ভারতের শ্রেষ্ঠ যেসব আকর্ষণ রয়েছে তার মধ্যে তাজ মহল প্রধানতম দৃষ্টি আকর্ষণীয় বর্তমান এবং চিরকালের জন্য। সাবেক একজন মার্কিন রাষ্ট্রপতি তাজমহল দেখে মন্তব্য করেছেন, ‘পৃথিবীতে দুই ধরণের মানুষ আছে- যারা তাজ দেখেছে আর যারা দেখেনি’। 
যাক আমি সৌভাগ্যবান ,তাজ দেখে ফেলেছি ।

আগামীকাল আবার অন্য কোথাও যাওয়ার অস্থিরতা মনের ভেতর এখন। 
তাজমহল দেখা শেষে গেলাম আগ্রা ফোর্ট।

যাওয়ার পথে উত্তর প্রদেশ সরকারের কুটির শিল্পের বিপণন সম্ভার পরিদর্শন।ভারত সরকার নিজেদের কুটির শিল্পের সাথে টুরিস্টদের পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য পুরো ভারত জুড়েই এমন অনেক বিপণন সম্ভার করে রেখেছে।এসব দোকানে কাপড় তো আছেই ।আছে কাঠ,শ্বেতপাথর,চামড়ার তৈরি নানা রকম জিনিসের প্রদর্শনী এবং সেগুলো বিক্রির ব্যাবস্থা ।





(বিপণন সম্ভারে সাজানো আগ্রার ঐতিহ্যবাহী শ্বেতপাথরের নানা রকম জিনিস)

এই জিনিসটা আমার অনেক পছন্দ হয়েছে।আমাদের দেশেও যদি এই ব্যাবস্থা করা যেত !

যাইহোক ,

***** আগ্রা ফোর্ট *****

আগ্রা ফোর্ট 'যমুনা'র তীরে অত্যন্ত প্রাচীন একটি অবস্থানে অবস্থিত।তাজমহল থেকে ২কিমি দূরে ষোড়শ শতাব্দীতে সম্রাট আকবরের তৈরি এই দুর্গ ,যার আকর্ষণ তাজের থেকে কোন অংশেই কম নয় ।আগ্রা ফোর্ট ইউনেস্কোর অন্যতম বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত।


(ফোর্টের সামনে আমরা) 

আমাদের সাথে একজন গাইড ছিলেন,যিনি ফোর্টের ইতিহাস বলছিলেন ঘুরে দেখাতে দেখাতে।
এক সময় এটি ছিলো চৌহান রাজপুতদের অধিকৃত ইট-নির্মিত একটি দুর্গ । ১০৮০ খ্রিস্টাব্দে গজনোভিদের বাহিনীর আওতায় চলে আসে এ দুর্গ। সিকান্দার লোদী (১৪৮৭ থেকে ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন) ছিলেন দিল্লীর প্রথম সুলতান, যিনি দিল্লী থেকে আগ্রা এসে এই ফোর্টে বসবাস করেন। তিনি এখান থেকে দেশ শাসন করায় আগ্রা দেশের দ্বিতীয় রাজধানীর গুরুত্ব লাভ করে। সিকান্দার লোদী ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দে আগ্রা ফোর্টে মৃত্যুবরণ করেন। তারপর তাঁর পুত্র ইব্রাহিম লোদীর অধিকারে এ দুর্গটি ছিলো প্রায় ৯ বছর। ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে ইব্রাহিম লোদী পানিপথে পরাজিত ও মৃতু্যবরণ করার পর আগ্রা ফোর্ট চলে যায় মোঘলদের অধিকারে। তবে লোদীদের সময়ে এ ফোর্টে পৃথক ক'টি রাজপ্রাসাদ, কূপ ও মসজিদ নির্মিত হয়।


(প্রধান প্রবেশ দ্বার)

'কোহিনূর' নামক বিখ্যাত হীরকসহ বিপুল পরিমাণ ধন মোঘলদের করায়ত্ত হয় আগ্রা ফোর্ট তাদের অধিকারে চলে আসার পর।১৫৩০ খ্রিস্টাব্দে আগ্রা ফোর্টে সম্রাট হুমায়ুনের রাজ্যাভিষেক হয়। ১৫৩৯ খ্রিস্টাব্দে চৌসাতে তার পরাজয়ের পর তিনি আগ্রাতে পুনরায় চলে আসেন।

হুমায়ুন নামাতে কথিত আছে,নিজাম নামের এক পানি বহনকারী হুমায়ুনকে ডুবে মরে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করায় তাকে আগ্রা ফোর্টে অর্ধদিবসের জন্যে রাজমুকুট পরিয়ে কৃতজ্ঞতাসূচক সম্মান প্রদর্শন করা হয় এবং এর স্মরণে মুদ্রাও প্রচলন করা হয়। ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দে হুমায়ুন বিলগ্রামে পরাজিত হন। এতে আগ্রা ফোর্ট ৫ বছরের জন্যে শেরশাহের অধিকারে চলে যায়। ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে পানিপথে মোঘলরা চূড়ান্তভাবে আফগানদের পরাজিত করে ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতে তাদের দেড়শ' বছরের নিরবচ্ছিন্ন শাসন কায়েমের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করে।
মোঘল সম্রাট আকবরের শাসনকাল ছিলো প্রায় পঞ্চাশ বছর (১৫৫৬-১৬০৫)।
তিনি এটিকে তাঁর রাজধানীতে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নেন।তিনি 'বাদলগড়' নামে ইট-নির্মিত আগ্রার এই ফোর্টকে জরাজীর্ণ অবস্থায় দেখতে পেয়ে একে লাল বেলে পাথর দ্বারা পুনঃ নির্মাণের নির্দেশ দেন। অভিজ্ঞ স্থপতিদের দ্বারা এ ফোর্টের ভিত্তি স্থাপন করা হয়। বৃহদায়তনে বেশ স্থূলভাবে এ ফোর্টের সীমানা প্রাচীরের অভ্যন্তর ভাগ ইট দ্বারা নির্মাণ করে এর বহিরাংশে দেয়া হয় লাল বেলে পাথর। ১৫৬৫ থেকে ১৫৭৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় ৮ বছর পর্যন্ত চলে এ ফোর্ট পুনঃ নির্মাণের কাজ। এ সময়ে প্রতিদিন প্রায় চার হাজার নির্মাণ শ্রমিক এ কাজে নিয়োজিত ছিলেন।

এখন পর্যন্ত এটি লাল বেলেপাথরের চারিদিকে পরিখা এবং বাগান ঘেরা দারুণ সুরক্ষিত এক দুর্গ ।শত্রুসৈন্য দুর্গের কাছে এসেও যাতে সহজে ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্যে পরিখায় থাকতো কুমিরের মতো হিংস্র জলজ প্রাণী, আর বাগানে থাকতো শ্বাপদ_হিংস্র জন্তু।


(পরিখা এবং বাগানের ধ্বংসাবশেষ)

এ দুটো বিপদসঙ্কুল পর্যায় অতিক্রম করে শত্রু যদি দুর্গে প্রবেশও করে তখন ছিল অন্য ব্যাবস্থা। প্রধান প্রবেশ পথ ধরে গেলাম ভেতরে ।ধীরে ধীরে উপরে উঠে গেছে সমতল সিঁড়ি (অনেকটা হুইল চেয়ারে চলাচলের জন্য যেমন সিঁড়ি থাকে ,সেরকম) ।
রাজারা যেহেতু ঘোড়ায় চলাচল করতেন,তাই পথটা এমন।দুই পাশে বিশাল বিশাল দেয়াল । দেয়ালে একধরনের ছিদ্র আছে,শত্রু আক্রমণ করলে যেখান দিয়ে গরম তেল ঢেলে দেওয়া হত । যাতে ঘোড়াগুলো আর এগুতে না পারে। এটা ছিল দুর্গ রক্ষার সব শেষ উপায়।


(দুপাশে বিশাল দেয়াল ও সমতল সিঁড়ি,যেখানে সর্বদা থাকতো সতন্ত্র পাহারা)

পুরাটাই পাথরের নির্মিত ফোর্ট , কোথাও ইট চোখে পড়ে না। ইতিমধ্যে আমরা দুইটা প্রধান গেট পার করে এসেছি।
ভিতরে প্রবেশ করতেই চোখ জুড়িয়ে গেল, নির্মাণ শৈলী অসাধারণ । এই দুর্গে দ্রষ্টব্যগুলি হল- যোধাবাঈয়ের মহল, শাহজাহানের খাস মহল, অঙ্গরী বাগ, মিনা মসজিদ, দেওয়ানি আম, দেওয়ানি খাস, শিশমহল, নাগিনা মসজিদ, মছি ভবন, মিনা বাজার প্রভৃতি।

এখান থেকে তাজমহলও দেখা যায় ।মৃত্যুর পরে যার স্থান হয়েছে তাজমহলে ,জীবিত কালে সেই মমতাজ নাকি এখানেই থাকতেন। জীবনের শেষ দিনগুলোয় শাজাহান ও এখানেই থেকেছেন ছেলেদের হাতে বন্দী হয়ে।


(আগ্রা দুর্গ এবং দূরে তাজমহল)
আগ্রা ফোর্টের সম্মুখে সংরক্ষিত একটি বিরাট শিলালিপিতে উৎকীর্ণ আছে এর প্রকৃত ইতিহাস।
এতে লিখা আছে, ''আগ্রা ফোর্ট হচ্ছে ভারতের সবচে' গুরুত্বপূর্ণ ফোর্ট। বাবর, হুমায়ুন, আকবর, জাহাঙ্গীর, শাহ্ জাহান ও আওরঙ্গজেবের মতো মহামতি মোঘল সম্রাটগণ এখানে বসবাস করেছেন। এখান থেকেই তারা সমগ্র দেশ শাসন করতেন। সর্ববৃহৎ রাষ্ট্রীয় কোষাগার ও টাকশাল ছিলো এখানেই। এ ফোর্টটি বিপুল সংখ্যক রাষ্ট্রপ্রধান, বিদেশী রাষ্ট্রদূত, উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গ ও পর্যটক পরিদর্শন করেছেন। আগ্রা ফোর্ট ব্যতীত ভারতের অন্য কোনো ফোর্ট বা দুর্গের এতোটা খ্যাতি নেই।'' 
ফোর্টের চারদিকে চারটি গেট ছিলো। নদী অভিমুখী গেটটির নাম ছিলো খিজরী গেট, যার সম্মুখে নির্মাণ করা হয় বিভিন্ন প্রকারের বহু কূপ। 
ইতিহাসবিদ আবুল ফজলের বর্ণনামতে, বাংলা ও গুজরাটি সুন্দর নকশায় আগ্রা ফোর্টে পাঁচ শতাধিক অট্টালিকা নির্মাণ করা হয়েছিলো, যার কিয়দংশ সম্রাট শাহ্ জাহান সাদা মার্বেলে প্রাসাদ নির্মাণের প্রয়োজনে ভেঙ্গে ফেলেছিলেন। জানা যায়, আকবর সহ অন্যান্য মোঘল সম্রাট নির্মিত আগ্রা ফোর্টের অধিকাংশ অট্টালিকা ব্রিটিশ কর্তৃক সৈন্যদের ব্যারাক নির্মাণের প্রয়োজনে ধ্বংস করা হয়। ফোর্টের দক্ষিণ-পূর্বাংশে বড় জোর ৩০টি মোঘল স্থাপনা টিকে আছে।


(ভতর দিক থেকে দুর্গের গেট)

দিল্লী গেট, আকবর গেট এবং 'বেঙ্গল মহল' নামে একটি প্রাসাদই এখন আকবরের অট্টালিকা সমূহের প্রতিনিধিত্ব করছে। দিল্লী গেটটি ছিলো শহরমুখী।
আরোহীসহ হাতীরূপী দুটি লাইফ সাইজের পাথর অভ্যন্তরীণ গেটে স্থাপিত, যার নাম ''হাতী-পল''।
দিল্লী গেটকেই সম্রাটের আনুষ্ঠানিক প্রবেশের স্মারক হিসেবে নির্মাণ করা হয়। ব্রিটিশ কর্তৃক 'আকবর গেটে'র পুনঃ নামকরণ করা হয় 'অমর সিং' গেট। এ গেটটি দিল্লী গেটের মতোই। এ দুটো গেটই লাল পাথরে নির্মিত। 'বেঙ্গল মহল'ও তৈরি একই পাথরে, যা বর্তমানে 'আকবরি মহল' ও 'জাহাঙ্গীর মহলে' বিভক্ত।
আকবরের মৃত্যুতে ১৬০৫ খ্রিস্টাব্দে তাঁর পুত্র জাহাঙ্গীরের সম্রাট হিসেবে রাজ্যাভিষেক হয় এই আগ্রা ফোর্টে।
পরবর্তীতে সম্রাট শাহ্ জাহান ১৬২৮ খ্রিস্টাব্দে আগ্রা ফোর্টে তাঁর রাজমুকুট পরিধান করেন। আগ্রা ফোর্টে সাদা মার্বেলে নির্মিত যতো প্রাসাদ আছে সবই তাঁর গড়া। তিনি এ ফোর্টে মোতি মসজিদ, নাগিনা মসজিদ ও মিনা মসজিদ নামে সাদা মার্বেল পাথরে তিনটি মসজিদ নির্মাণ করেন।
১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দে সামুগড়ের যুদ্ধের পর সম্রাট শাহ্ জাহানের তৃতীয় পুত্র আওরঙ্গজেব আগ্রা ফোর্ট ঘেরাও করেন এবং নদী থেকে এ ফোর্টের পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেন। শাহ্ জাহান কূপের পানি পান করতে না পারায় পুত্রের নিকট আত্মসমর্পণ করেন। আওরঙ্গজেব তাঁর পিতা শাহ্ জাহানকে কারাদণ্ড প্রদান করেন। এ দণ্ড ভোগ করতে হয় তাঁকে আগ্রা ফোর্টেই। ১৬৫৮ থেকে ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত এখানেই ৮ বছর কারাবাস করেন শাহ্ জাহান।মৃত্যুর পর তাঁর মৃতদেহ এখান থেকে নৌকাযোগে নিয়ে প্রিয়তমা স্ত্রী মমতাজের পাশে তাজমহলে সমাহিত করা হয়।
সম্রাট শাহ্ জাহান মৃত্যুর পর আগ্রা তার আড়ম্বর ও জমক হারায়।আগ্রা ফোর্টের আঠারশ' শতাব্দীর ইতিহাস হচ্ছে অবরোধ ও লুণ্ঠনের এক গদ্য কাহিনী। জাট ও মারাঠারা ছিলো যে কাহিনীর মুখ্য চরিত্রে।


(অমরসিং দরওয়াজা)

আমরা অমরসিং দরওয়াজা দিয়ে ঢুকে সামনেই দেখলাম জাহাঙ্গির মহল। সাদা মার্বেলে তৈরি সম্রাটের নিজস্ব মহল 'দেওয়ান-ই-খাস।' গুরুত্বপূর্ণ অর্থাৎ খাস ব্যাক্তিদের জন্য এই দরবার।দারুণ কারুকার্যময় এক স্থাপত্য।
এখানেই ছিল বহুল আলোচিত ''তখত-ই-তউস'' অর্থাৎ ময়ূর সিংহাসনটি, পরে যেটি দিল্লী ফোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়।


('দেওয়ান-ই-খাস।' যোধা-আকবর সিনেমার এক দৃশ্যে ঐশ্বরিয়া রাই নাকি এখানে তরবারির কসরত দেখিয়েছিলেন।এই তথ্য গাইড মহাশয় আমাদের ফ্রিতে দিয়েছিলেন)


(এই বেদিতে বসানো ছিল ময়ূর সিংহাসন।পেছনের দরওয়াজা দিয়ে সম্রাট দরবারে প্রবেশ করতেন।)

''দেওয়ান-ই-আম'' নামে সাধারণ প্রজাদের জন্য আরেকটি দরবার কক্ষ আছে।যার মেঝে এবং ছাদ লাল বেলে পাথরে নির্মিত। 'দেওয়ান-ই-আমে'র ব্যালকনিতে বসে সম্রাট প্রজাদের অভিযোগ শুনতেন।


(''দেওয়ান-ই-আম''।
মাঝে মাঝে এর উঠানে প্রজাদের সঙ্গে নিয়ে জলসাও উপভোগ করতেন সম্রাট)


এর কাছেই নদীর পার্শ্ববর্তী অবস্থানে রয়েছে জেসমিন প্রাসাদ। সুসজ্জিত, অলঙ্কৃত এ প্রাসাদে বন্দী অবস্থায় জীবনের শেষ ক'টা দিন কাটান সম্রাট শাহ্ জাহান।
এ প্রাসাদের আয়না দিয়ে তিনি দেখতেন তাঁরই অমর সৃষ্টি প্রিয়তমা স্ত্রী মমতাজের সমাধি_তাজমহল। জেসমিন প্রাসাদ লাগোয়া সুউচ্চ দেয়াল ঘেরা সাদা মার্বেলের ছোট্ট মিনা মসজিদে শাহ্ জাহান বন্দী অবস্থায় ইবাদতে মশগুল থাকতেন।


(জেসমিন প্রাসাদের বারান্দা থেকে তাজমহল)

ফোর্টে রয়েছে মোতি মসজিদ।গাইড বললেন ,এক সময় এখানে ছাদ থেকে সোনার শিকল দিয়ে ঝোলানো থাকতো বিশালাকৃতির বহু মূল্যবান মুক্তা।


(উঁচু পাঁচিলে ঘেরা মোতি মসজিদ)


*****ফতেহপুর সিক্রি******

আগ্রা ফোর্টের পরে গেলাম ফতেহপুর সিক্রি।
আগ্রা থেকে ৩৬কিমি দূরে সম্রাট আকবরের একসময়ের রাজধানী শহর ফতেহপুর সিক্রি।মাইল ছয়েক দীর্ঘ এক পাহাড় চূড়োয় তৈরি হয়েছিল। অনুপম ভাস্কর্যমণ্ডিত বুলন্দ দরওয়াজা দিয়ে প্রবেশ করলে সামনেই জামি মসজিদ। মসজিদ চত্ত্বরের মাঝে আছে মুসলমান ফকির শেখ সেলিম চিস্তির সমাধির।


(বুলন্দ দরওয়াজা,ছবি নেট থেকে)

কথিত আছে,
নিঃসন্তান আকবর সন্তানকামনায় খাজা সেলিম চিস্তির দ্বারস্থ হলে পিরবাবার আশীর্বাদে সম্রাটের হিন্দু মহিষী যোধাবাই-এর গর্ভে জন্ম নেয় এক পুত্র সন্তান। গভীর কৃতজ্ঞতায় সম্রাট সেই সন্তানের নাম রাখেন ‘সেলিম’, যিনি পরে সম্রাট জাহাঙ্গির নামে ইতিহাসে পরিচিত। আর খাজা সেলিম চিস্তির সাধনভূমিতে আকবর গড়ে তোলেন এক অনুপম নগরী। ফতেহপুর সিক্রি স্থান পায় ইতিহাসে। 


(ফতেহপুর সিক্রি)

আগ্রা ভীষণ ঐতিহ্যমণ্ডিত ,গুরুগম্ভীর এক শহর।যেখানে একসময় ছিল জাঁকজমক, হর্ষধ্বনির উৎফুল্লতা । আজ যা পড়ে আছে কালের স্বাক্ষী হয়ে।

আগ্রা ফোর্টের আরও কয়েকটি বোনাস ছবি---->


(কাছ থেকে 'দেওয়ান-ই-খাস।')







(বেগম মহল)


(দরবার শেষে মহলে প্রবেশের টানা বারান্দা)


(কারুকার্যময় রত্নখচিত পিলার)


(শ্বেতপাথরের সূক্ষ্ম নকশা কাটা দেয়াল)


(বেগমের সজ্জা ঘর ও স্নান করার ফোয়ারা)


(মমতাজ মহলের বারান্দা।যেখানে পরবর্তীতে সম্রাট শাহজাহান বন্দী থেকেছেন।এই বারান্দা সংলগ্ন কক্ষ থেকেই তিনি আয়না দিয়ে তাজমহল দেখতেন)


(সম্রাট আকবর কবুতর ভীষণ ভালবাসতেন।এটা কবুতর উড়ানোর বেদী,যেখানে রোজ সকাল-বিকেল যোধা-আকবর একসঙ্গে অবসর কাটাতেন আর কবুতরদের খাবার দিতেন)


(''দেওয়ান-ই-আম'' এ জলসা বসলে এখানে বসে সম্রাজ্ঞী তার সখীদের নিয়ে তা উপভোগ করতেন।মাঝের বক্স আকৃতির কুঠুরিতে বসতেন সম্রাজ্ঞী নিজে এবং আশেপাশের গুলোতে তার সঙ্গিনী ও রাজপরিবারের অনান্য মহিলাগণ।কুঠুরিগুলো ঢাকা থাকতো দামী ঝালর/পর্দা দিয়ে)








(লাল বেলেপাথরের অপরূপ কারুকার্য দুর্গের সবখানেই)


(হিন্দু রাণী যোধার মহল।যার একদিকে সম্রাটের বানিয়ে দেয়া কৃষ্ণ মন্দির এবং অন্যদিকে যোধার শোবার ঘর।)


(যোধা মহলের মিনার)




(দুর্গের পেছনের দিকের ফটক)


ভর দুপুর বেলায় ক্লান্ত হয়ে ফিরে এলাম হোটেলে । দুপুরের খাওয়া সেরে গেলাম টুকটাক শপিং করতে । শ্বেতপাথরের রেপ্লিকা তাজমহল,নবাবী আতর এসব ছাড়া কি আর আগ্রা থেকে ফেরা যায় !
আজকের রাতটাই আগ্রাতে।কাল ভোরেই আবার যাত্রা শুরু । আবার সেই ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা,আবার লাগেজ নিয়ে ছুটোছুটি করে ট্রেনে ওঠা ,বাঙ্ক খুঁজে বের করা,আবারও ছুটে চলা ঝড়ের বেগে । এবার আমরা যাচ্ছি রাজস্থানের জয়পুর । আমার অনেকদিনের দেখতে চাওয়া জায়গাগুলোর একটা । 


সুত্রঃ 

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১১:০১

http://www.somewhereinblog.net/blog/sanchitanindya/29670735











1 comment:

Sanjib said...

Very beautiful writing skills. Keep it up. 👍